শুধু গাঁজার এক টান
আমরা সবেই তিন বন্ধু মিলে এক যায়গায় বেরা জাছি, আমাদের পাশের গ্রামের এক কবির গানের অনুষ্ঠান হচ্ছে সেই খানে অনেক শ্রেনীর মানুষ আসছে গান শুনতে,
আমার সেই গানের মজা নিচ্ছি আর আমাদের পাশে এক দল লোক বশে গাঁজা কাটছে জেমনি কবির গান আর এক পাশে গাঁজার ঘান মনটা যেনো বলছে মারি গাঁজায় এক টান। আর ছিলিমে ভরলো গাঁজা আমরা মিশে গেলাম তাদের দলে আমরাও রাজা, ছিলিমে জালালো আগুন দিল মারলো গাঁজার এক টান একে একে টানলো সবে কবির গানে মাতছে সবাই উঠছে চাঁদের আলো গাঁজা টানতে লাগছে ভালো।আমরা তিন বন্ধু গাঁজার টানে পিনিকে ভরপুর কবির গান শুনতে লাগছে মধুর, গানে শুধু গাঁজা নিয়ে গান বলছে বারে বারে হায়রে গাঁজা প্রেমিক। গুরু বলেছে জারা করেছ শুরু গাঁজা টান লেগে থাক গাঁজা ছারা আর কিছুই নাই রে, শুধু গাঁজায় মোর প্রাণ গাঁজায় মোর জীবন। জারা গাঁজা প্রেমিক তারা বুঝে একবেলা গাঁজা না টানলে মনে হয় মুখের খাবারের সাধ জেনো লাগেনা, গাঁজা খেলে মনে হয় খাবারে জেন সাধ পেলাম তাই তো লোকে এখন করছে গাঁজার চাষ গাঁজা এখন আমাদের হাতের মুঠোই।
আমরা গাঁজা প্রেমিক।
আমাদের ছেলেদের একটাই পিনিক তা হলো গাঁজা খাওয়া। একদিন আমাদের ছেলেরা পিকনিক জাছে বাবার দোরবার বারয়াউলিয়ি আমাদের এলাকায় দুইটি বাসছে করে জাছি, আমরা বারয়াউলিয়ি চলে গেলাম এই খানে এসে সবে নামলাম বেলা পাঁচটা বাজে , একটু ঘুরে বেরাতেছি আর অনেক জায়গা ঘুরলাম, সন্ধা হল সবাই বসলাম গাঁজার আসরে কাটছি গাঁজা মারছি টান। যেন খাজার দরবারে মজায় আলাদা ।
#গাঁজার গাছ
মহাদেব স্বর্গে নন্দি ভূঙ্গিদের নিয়ে আছেন। মহাদেবের মনে সুখ নেই, কারণ কোনো নেশা করেই আনন্দ পাচ্ছেন না। তিনি পৃথিবীতে নেমে এলেন নেশার বস্তুর সন্ধানে। দেখা করলেন লোকমান হেকিমের সঙ্গে। যদি লোকমান হেকিম কিছু করতে পারেন। ইনিই একমাত্র মানুষ যার সঙ্গে গাছপালারা কথা বলে। মহাদেব ও লোকমান হেকিম বনেজঙ্গলে ঘুরছেন, হঠাৎ একটা গাছ কথা বলে উঠল। গাছ বলল, লোকমান হেকিম, আমি গাঁজাগাছ। আমাকে মহাদেবের হাতে দিন। মহাদেবের নেশার বাসনা তৃপ্ত হবে। মহাদেব গাঁজাগাছ নিয়ে স্বর্গে চলে গেলেন। গাঁজাগাছই একমাত্র গাছ যা পৃথিবী থেকে স্বর্গে গেল।
এই গাঁজাগাছ আমি প্রথম দেখি বৃক্ষমেলায় বন বিভাগের স্টলে। নুহাশপল্লীর ঔষধি বাগানে এই গাছ নেই। আমি কিনতে গেলাম। আমাকে জানানো হলো, এই গাছ নিষিদ্ধ। আনা হয়েছে শুধুমাত্র প্রদর্শনীর জন্যে। অনেক দেনদরবার করেও কোনো লাভ হলো না।
আমি গাঁজাগাছ খুঁজে বেড়াচ্ছি, এই খবর ছড়িয়ে পড়ল। কেউ কেউ তাদের দলে ভিড়েছি বলে বিমল আনন্দ পেলেন, আবার কেউ কেউ আমার দিকে বড় বড় চোখে করে তাকাতে লাগলেন।
জনৈক অভিনেতা (নাম বলা যাচ্ছে না, ধরা যাক তার নাম পরাধীন) আমাকে ক্ষুব্ধ গলায় বললেন, হুমায়ূন ভাই, আপনি গাঁজাগাছ খুঁজে পাচ্ছেন না এটা কেমন কথা বলছেন! আমাকে বলবেন না? আমি তো গাঁজার চাষ করছি।
আমি বিস্মিত গলায় বললাম, কোথায় চাষ করছ?
আমার ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে। আমার অনেক টব আছে। ভালো জিনিস পাই। ভালো জিনিসের মজাই আলাদা।
আমি বললাম, তুমি গাঁজার চাষ করছ, তোমার বাড়ির কি কেউ জানে?
না। তাকে বলেছি, এগুলি পাহাড়ি ফুলের গাছ খুব লাজুক ফুলের গাছ। টবে পানি আমার স্ত্রী দেয় তো।
পরাধীনের সৌজন্যে দুটা গাঁজাগাছের টব চলে এল। যেদিন গাছ লাগানো হলো তার পরদিনই চুরি হয়ে গেল। আমি কিছু বুঝলাম না, যে নিয়েছে তার প্রয়োজন আমার চেয়েও বেশি।
গাঁজার চাষ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। গাঁজা খাওয়ার ব্যাপারেও নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা আছে। বাংলাদেশ পুলিশ হ্যান্ডবুকে (গাজী শামসুর রহমান) প্রকাশ্যে সিগারেট খেলে ১০০ টাকা শাস্তির কথা বলা হয়েছে। গাঁজা বিষয়ে কিছু পেলাম না। প্রকাশ্যে থুথু ফেললেও ১০০ টাকা জরিমানা। রমজান মাসে গাঁজা টান বারন করলে পুলিশ বাধাদে তাই মুসল্লিদের থুথু ফেলায় কি আইন শিথিল হবে না? তাই না বারানো ভাল হবে
গাঁজা খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সরকার মনে হয় নমনীয়। মাজার মানেই গোল হয়ে গাঁজা খাওয়া। লালনের গান শুনতে কুষ্টিয়ায় লালন শাহর মাজারে গিয়েছিলাম। গাঁজার উৎকট গন্ধে প্রাণ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। এর মধ্যে একজন এসে পরম বিনয়ের সঙ্গে আমার হাতে দিয়ে বলল, স্যার, খেয়ে দেখেন। আসল জিনিস। ভেজাল নাই। সিগারেটে তামাক ফেলে গাঁজা ভরে এই আসল জিনিস বানানো হয়েছে।
গাঁজাগাছ সম্পর্কে কিছু তথ্য। আমার লেখা বৃক্ষকথা নামের বইয়ে বিস্তারিত উল্লেখ্য আছে। এই বইটি অন্যপ্রকাশ থেকে বের করা হয়েছে। প্রথম দিনের বিক্রি দেখে ‘অন্যপ্রকাশ’-এর স্বত্ত্বাধিকারী মাজহার অবাক। দ্বিতীয় দিনে অদ্ভুত কাণ্ড। যারা বই কিনেছে, তারা সবাই বই ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে গেছে। তারা হুমায়ূন আহমেদের কাছে গল্প চায়। বৃক্ষবিষয়ক জ্ঞান চায় না। হা হা হা।
গাঁজাগাছের স্ত্রী-পুরুষ আছে। দুটিতেই ফুল হয়। তবে পুরুষ-গাছের মাদকক্ষমতা নেই।স্ত্রী-গাঁজাগাছের মাদকাশক্তি বেশি।
গাঁজা-গাছের পাতা শুকিয়ে গাঁজা তৈরি হয়। এই গাছের কাণ্ড থেকে যে আঠালো রস বের হয় তা শুকালে হয় চরস। চরস নাকি দুর্গন্ধময় ভালোই নোংরা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে খেতে হয়।
স্ত্রী-গাঁজাগাছের পাতাকে বলে ভাং। এই পাতা দুধে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় ভাঙের শরবত, অন্য নাম সিদ্ধির শরবত। এই শরবত ভয়ঙ্কর এক হেলুসিনেটিং ড্রাগ।
আমার এক বন্ধু তার অনেক শখ ভাঙের শরবত খেয়ে ঢাকায় এক হোটেলে চব্বিশ ঘণ্টা প্রায় অচেতন হয়ে পড়ে ছিল। তার কাছে মনে হচ্ছিল, তার দুটা হাত ক্রমাগত লম্বা হচ্ছে। হোটেলের জানালা দিয়ে তাইসেই হাত বের হয়ে আকাশের দিকে চলে যাচ্ছে বলে।
গাঁজাগাছের ফুল, ফল, পাতা এবং গা থেকে বের হওয়া নির্যাসে আছে সত্তরের বেশি ক্যানাবিনয়েড। এগুলোর মধ্যে প্রধান হলো ক্যানাবিনল, ক্যানাবিডিওল, ক্যানাবিডিন। নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ ও প্রচুর আছে।
এইসব জটিল যৌগের কারণেই মাদকতা ও দৃষ্টিবিভ্রম!