> অনিক আজ দেখো কিন্তু তোমাকেই করতে হবে। (রাফি)
> আমার খুব ভয় লাগছে। আজ না. পরে আরেকদিন বলব। (অনিক)
> ভয়ে ডিম চুপ কর। আজ আমাকে বলতে হবে। অথবা আপনার কপালে গন্ধরস থাকবে। (মিশু) মিশুর কথা শুনে অনিক ভয় পেয়ে যায়। কারণ মিশু খুব স্বাস্থ্যকর এবং মারমাইটও তৈরি করতে পারে।
> আমাকে মারবেন না ভাই। আমি ছোট মানুষ! (অনিক)
>কিন্তু তুমি যা বলবে আমরা তাই করব। আসুন আজ এটির একটি এস্পার বা অস্পার করি। যে আপনার অহং আসছে. চলো রাফি আমরা লুকিয়ে আছি।
তাই রাফি আর মিশু দ্রুত সেখান থেকে বিদায় নিল। অনিক দূরে দাঁড়িয়ে কি করে দেখছে।
অনিক ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাফি ও মিশু ক্লাস শেষে স্কুলের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
অনিক ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। অহনা তার বন্ধুদের সাথে কথা বলে বাসায় যাচ্ছিল।
অনিক মনে মনে অনেক ভয় নিয়ে অহনাকে ডাকে।
>অহনা। (অনিক)
অহনা হঠাৎ ডাক শুনে উঠে দাড়ালো।
> কি ব্যাপার অনিক? কিছু বল? (অহং)
> হ্যাঁ। আমি বলতে চাইতেছি…
অনিক মাথা নেড়ে চারপাশে তাকায়। মিশু হঠাৎ দেখে অনিক মাইর দিকে ইশারা করছে। অনিক ভয় পেয়ে আবার অহনার দিকে তাকায়।
>না মানে...আসলে...মানে... (অনিক)
>তুমি কি এত কিছু বলতে চাও? কিছু বলার থাকলে সরাসরি বলুন। আমি এখন বাড়ি যেতে হবে. (অহং)
>আসলে অহনা, আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি। (অনিক চোখ বন্ধ করে বলে)
অহনা হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।
> এটা বলতে ৪ বছর লেগেছে!! (অহং)
আসলে মানে... (অনিক)
>আর বলো না। কাপুরুষ ডিম। (অহং)
>কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে যে আমি তোমাকে ৪ বছর থেকে পছন্দ করি!! (অনিক)
>আমি ক্লাস ফোর থেকে তোমাকে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছি। আর মেয়েরা সব বুঝতে পারে, এটা পাগলামি।
অহনা খুব স্মার্ট মেয়ে হলেও কথাটা বলতে খুব লাজুক। তাই সে কিছু না বলে একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।
.
> কি খবর অনিক, তুমি শালা ফাটলে। (মিশু)
>চল অনিক আজ তোকে খাইয়ে দিব। আমি এখন পর্যন্ত সফল! (রাফি)
তারপর তিন বন্ধু মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়।
.
পরদিন থেকে অনিক আর অহনার প্রেম চলতে থাকে। একই ক্লাসে পড়ায় অনিক ও অহনার পরিচয় হয়। প্রাথমিক থেকেই দুজনেই একে অপরকে পছন্দ করত। কিন্তু অনিক ভীতু ছেলে তাই অহনাকে কখনো বলতে পারেনি। অহনা সবসময় অনিকের কাছ থেকে এই কথা শোনার অপেক্ষায় ছিল।
.
.
অনিক ও অহনার প্রেম ভালোই চলছিল। কিন্তু বেশিক্ষণ ভালো মেজাজে থাকার কথা কারো কপালে জুটছে না! অনিকের মামা দেখে অনিক আর অহনা একসাথে খাচ্ছে। অনিকের বাবা মিজান সাহেব ওই এলাকার একজন বিখ্যাত মানুষ। সে খুব রেগে যায় যখন সে শুনে যে তার ক্লাস এইট/নবমের ছেলে প্রেম করছে। সেদিন অনিক ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরলো।
>অনিক একটু শোন। (মিজান সাহেব)
>হ্যা বাবা বল। (অনিক)
>আপনি কোন মেয়ের সাথে ডেটিং করছেন? এটা কি সত্যি? (মিজান সাহেব)
> কে বলল! আপনি কখন ঘুরলেন? (অনিক)
> একদম কথা বলবেন না। সত্যি কথা বল। নয়তো আমি তোমাকে মেরে তোমার পিঠে চামড়া তুলে দেব। (মিজান সাহেব)
>আসলে বাবা মেয়েটিকে আমি অনেক পছন্দ করি। (অনিক)
>কি বললি!! আপনি এই বয়সে অনেক পরিণত! দারা.. বলেই সেদিন মিজান সাহেব অনিককে অনেক মারধর করেন।
.
রাতে অনিকের প্রচন্ড জ্বর হয়। তার প্রলাপে মা আর অহনা ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না।
.
৩ দিন পর অনিক মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠল।
> ৩ দিন কোথায় ছিলেন? আমি কতটা চিন্তিত ছিলাম জানো? (অহনা) অনিক সব খুলে অহনাকে বলল।
> ওহ, কিন্তু এই জিনিস. দেখ অনিক, আমার বাবা নেই। যদি আপনার বাবাও তাই করেন, তাহলে এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। সম্পর্কের শুরুতে এত ঝামেলা! জানি না এরপর কি!! এই বলে অহনার চোখে পানি চলে এলো।
>প্লিজ কেঁদো না। আমি এখানে.
>না অনিক। কারো সম্মতির বিরুদ্ধে সম্পর্ক করা ঠিক নয়।
এই বলে অহনা চলে যায়। অনিক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
.
রাতে অনিক বাসায় পড়াতে আসে।
কি হয়েছে বলো না কেন? (গৃহশিক্ষক)
>আসলে স্যার...
কথা শেষ করার আগেই অনিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনিককে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
.
> মিজান সাহেব। (ডাক্তার)
>হ্যাঁ ডাক্তার বলুন।
আপনার ছেলে অনেক বেশি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ঘুমের ওষুধ খেয়েছে।
> কি বললো!
> হ্যাঁ। সেটা সত্য. তোমার একটাই ছেলে আছে। ছেলেকে এত শাসন করলে কী হবে?
> এখন আপনি তার সাথে দেখা করতে পারেন।
> এখনো জ্ঞান ফেরেনি। অপেক্ষা করুন
>আচ্ছা।
.
এই গল্পে
কিছুক্ষণ পর-
এসব কথা শুনছেন? ঘুমের ওষুধ খাও কেন? (মিজান সাহেব)
>বাবা আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। (অনিক)
>তাহলে এই বয়সে আমার সম্মান ডুবে যাবে? (অনিকের বাবা)
>আমি ওর জন্য সব করতে পারতাম। তুমি শুধু তাকে ফিরিয়ে দাও।
>আচ্ছা, আমি ওকে তোমার হাতে তুলে দেব, কিন্তু একটা শর্তে। (মিজান সাহেব)
> কি পদে বলুন। (অনিক)
> ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। ভালো ফল পেতে হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, এমবিএ করতে হবে। নিজের চেষ্টায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। লোকে বলে মিজান সাহেবের ছেলে সব দিক দিয়ে সেরা। যেদিন আমি এটা করতে পারব, আমি নিজেই তোমাকে বিয়ে করব।
>ঠিক আছে বাবা। আমি আপনার শর্তাবলী সম্মত. অনিকের মুখে হাসি ফুটল।
.
এরপর মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করে অনিক। ছোটবেলা থেকেই অনিকের বুদ্ধিমত্তা মোটামুটি ভালো ছিল। আর অনিক ছিল ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্রদের একজন। তাই অনেক চেষ্টায় অনিক এসএসসি ও এইচএসসিতে সব বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছে এবং জেলায় তৃতীয় হয়েছে।
.
অহনা মধ্যবিত্ত ছাত্রী। সেও মোটামুটি ভালো ফলাফল পায়। মিজান সাহেব তার ছেলের সাফল্যে আনন্দিত। (মিজান সাহেব)
>না বাবা।বিশেষ কোনো কাজ নেই।রাফি ওদের সাথে দেখা করবো ভাবছিলাম। (অনিক)
>আচ্ছা ওদেরকেও তবে বাসায় আসতে বলো।আজ অহনা মামনিকে আংটি পড়াতে যাবো আমরা।তোমার কোনো সমস্যা আছে? (মিজান সাহেব) অনিক খুশিতে কি বলবে ভেবে পায়না আর তাকে বলল।
>কি হলো?যাবেনা আজ? (মিজান সাহেব)
>হ্যা বাবা যাবো।সমস্যা নেই কোনো। (অনিক)
>আচ্ছা। এখন তবে রেস্ট নাও।
.
অনিকের বাবা বাসার বাহিরে চলে যান। এরপর অনিক খুশিমনে অহনাকে কল দিলো-
>শুনলাম আজ নাকি তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে? (অনিক)
>বলো কি!কখন! (অহনা)
>সন্ধ্যায়।সাজগোজ করে রেডি হয়ে থাকবেন ম্যাডাম। (অনিক) অহনা বুঝতে পারে অনিক কি লুকোচ্ছে।
>হুম।ভুতনী সেজে বসে থাকবো।যাতে ছেলে আমাকে দেখার সাথেসাথেই অজ্ঞান হয়ে যায়। (অহনা)
>হাহা।আচ্ছা আপনার যেভাবে ভালো লাগো তাই করেন ম্যাডাম।আমার শুধু অহনাকে পেলেই চলবে। (অনিক)
>অহনা সবসময়ই আপনার জন্য আছে,এবং থাকবে। (অহনা)
>ওকে।See you.
.র শেষ এখানেই।তবে কাহিনী এখনো চলমান। অহনা এবং অনিকের বিয়ে হয়েছে গতবছর।
ওদের সংসারে কিছুদিন আগে এক নতুন সদস্যের আগমন ঘটেছে। অহনা ও অনিকের একমাত্র আদরের কন্যা আনিকা।আনিকাকে নিয়ে ওরা দুজনেই এখন সূখে আছে।
.
সত্যকারেরর ভালোবাসার অফুরন্ত ক্ষমতা রয়েছে। পারষ্পরিক বিশ্বাস এবং ভালোবাসার টানেই হয়তো অনিক এবং অহনা বহুবছর অপেক্ষা করে আর চেষ্টা করে রাখা ওদের পাশাপাশি পথ চলার স্বপ্ন পূরনে সক্ষম হয়েছে। বেচে থাকুক সবার ভালোবাসা। অপেক্ষা ফল সবসময় মধুর হয়।